রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান আট দিনব্যাপী জাতীয় এসএমই মেলায় বৃহস্পতিবার কথা হয় শাবাব লেদারের স্বত্বাধিকারী মাকসুদা খাতুনের সঙ্গে। আশানুরূপ এসএমই মেলায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আলাপচারিতায় জানা গেল, মাকসুদা খাতুনের চলার পথ তেমন মসৃণ ছিল না। শুরুতেই হোঁচট খেয়েছেন তিনি। কর্মজীবী পরিবারের মেয়ে, পরিবারের কারও ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা ছিল না। মাকসুদা নিজেই একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর চাকরি ছেড়ে বায়িং হাউসে যোগ দেন।
মাকসুদা তার স্বামী শোয়েব হোসেনের তৈরি চামড়ার গ্লাভস রপ্তানি করতেন। একবার সেই ব্যবসায় বড় ক্ষতি হয়। লোকসান সামলাতে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে বাধ্য হন এই দম্পতি। কিন্তু তারপরও ঋণ পরিশোধ করা হয়নি। ততক্ষণে মাকসুদা বুঝতে পেরেছে চাকরির টাকায় ঋণ শোধ করা যাবে না। তাই তিনি ব্যাংকের সঞ্চয় ভেঙে গয়না বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
মাকসুদা খাতুন 2015 সালে মাত্র 5 জন শ্রমিক নিয়ে হাজারীবাগে শাবাব লেদার চালু করেন। এখন কর্মী বেড়ে হয়েছে ৪৭ জনে। মাকসুদা বলেন, 'আমার স্বামীর আগে থেকেই চামড়ার ব্যবসা ছিল। আবার আমি নিজে বায়িং হাউসে কাজ করেছি। দুজনের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে চামড়ার ব্যবসা শুরু করি। শুরুতে পরিস্থিতি এমন ছিল যে, দোকানে পণ্য বিক্রি করতে হতো। এভাবে প্রথম বছর কেটে যায়।
'মাকসুদাখাতুন বলেন, "শুরুতে, আমি ক্রয় ঘর আমি ই-মেইলের মাধ্যমে জানত কিছু ক্রেতাদের কাজ নমুনা এবং ছবি পাঠাতে ব্যবহার।" পরে তারা একটি ওয়েবসাইট তৈরির পরামর্শ দেন। এক পর্যায়ে, 2016 সালের মার্চ মাসে, এক ডাচ দম্পতি হঠাৎ একটি ব্যাগ অর্ডার করেন। তারা সেই ব্যাগ জাপানে রপ্তানি করবে। এই ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
মাকসুদা জানান, ক্রয়াদেশের পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শাবাব চামড়াজাত পণ্য এখন স্পেন, ইতালি ও কানাডায় নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। এখন তার রপ্তানি আয় বছরে দুই কোটি টাকার বেশি।
ব্যবসা করতে ঋণ নিয়েছেন মাকসুদা ব্যাংক। সময়মতো তা শোধও করেছেন। সে জন্য ব্যাংকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। করোনার সময় ব্যবসায় ধস নামলে তিনি কী করেন জানতে চাইলে মাকসুদা বলেন, করোনার শুরুতে সরকার যে প্রণোদনা ঋণ দিয়েছে তা তারা পেয়েছেন। সে সময় তিনি স্পেনে বেল্ট রপ্তানি করেন। তাই স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে কোনো সমস্যা হয়নি।
2019 সালে, মাকসুদা রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে একটি দোকান কিনেছিলেন। রপ্তানির পাশাপাশি তার শাবাব দোকান ও অনলাইন মার্কেটে পণ্য বিক্রি করছে। ধীরে ধীরে ব্যবসা সম্প্রসারণের স্বপ্ন দেখেন মাকসুদা।