বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে পড়ে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান। তখন থেকে তার ভারতে থাকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, বিশেষ করে যখন তার বৈধ থাকার সময়সীমা ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়।
ভারতীয় নিয়মাবলী এবং হাসিনার বর্তমান অবস্থা
ভারতের ইমিগ্রেশন নিয়ম অনুসারে, শেখ হাসিনা একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টের মাধ্যমে ৪৫ দিনের জন্য ভারতে থাকতে পারছিলেন, যা শেষ হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর। এরপর তার ভারতীয় অবস্থানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখন, আইন অনুযায়ী, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ভারতীয় মাটিতে অবৈধ হয়ে যাবেন যদি নতুন কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।
ভারতের অবস্থান এবং সিদ্ধান্ত
ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ অবস্থান নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তাকে সরাসরি বাংলাদেশে পাঠানোর সম্ভাবনা কম। এর পরিবর্তে, তাকে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হতে পারে, যেভাবে তিব্বতী ধর্মগুরু দলাই লামাকে ভারতে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। তবে সবকিছুই ভারতের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার নেতৃত্বে থাকা মুহাম্মদ ইউনূস সরকার, হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে বেশ সক্রিয়। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ১৮০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। এর মধ্যে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা বর্তমানে কোন ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে ভারতে আছেন, তা তারা জানেন না এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ঢাকায় কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি, তবে এটি নিশ্চিত যে, হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
এই পুরো পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। শেখ হাসিনাকে ভারতীয় মাটিতে রাখা হবে কিনা, এবং রাখলে কী ধরণের আইনি বা কূটনৈতিক ভিত্তিতে তা হবে—এই বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু বলা যায় না। তবে ভারত যদি তাকে আশ্রয় দেয়, তাহলে সেটি দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে একটি নতুন মোড় আনবে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে।