সিজারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে
১. প্রথম বাচ্চা সিজারিয়ান হলে পরের বাচ্চা গুলো নরমাল হওয়ার সম্ভবণা অনেক কমে যায়।২. মাকে যে এ্যানেস্হেসিয়া দেওয়া হয় সেই কারনে আরো সমস্যা হতে পারে।৩. সিজার অপারেশন করতে গিয়ে অনেকসময় খাদ্যনালী সহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।৪. অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ প্রসাব ও খাবার নালীতে ইনজুরি দেখা দিলে তারাপর যদি বারবার সিজার হয় তবে সারাজীবন বড় সমস্যা মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হয়।৫. সিজার করলে তো কাটতেই হবে সেক্ষেত্রে আপনার কাটা থেকে হার্নিয়া হতে পারে।৬. আবার কারোর সেলাই থাকা কালিন ইনফেকশন হয়। আবাই সেলাই করতে হয়।৭. অনেকের সারাজীবন ই ব্যাথা থাকে। কোনো ভাব চাপ লাগলেই ব্যাথা পেতে হয়।৮. অনেকের আবার সিজার হওয়ার পর এসিডিটি হয়।৯. সিজার হলে বুকে দুধ আসতে অনেকটাই দেরি হয় এতে প্রথমে বুকের দুধ খেতে পারেনা নবজাতক শিশু।১০. স্বাভাবিক প্রসবের পর যতটা ওজন কমানো সম্ভব হয় তা সিজার এর পর সম্ভব হয়না।১১. অনেক সিজারিয়ান মা মনে করেন যে তিনি দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছেন।১২. সিজারের আগে যে ইনজেকশন দেওয়া হয়, কারনে অনেক মা বলে থাকেন, তার মেরুদণ্ড তে ব্যাথা হয়।
সিজার অপারেশন
সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে অপারেশনের আগে হাসপাতালে আপনার কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো কোন ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করা।
অ্যানেস্থেসিয়া
সিজার অপারেশনের প্রস্তুতি পর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া বা সহজ ভাষায় অচেতন করা।
সিজারের জন্য আপনাকে আংশিকভাবে (যেমন: কোমর থেকে পা পর্যন্ত) অথবা পুরোপুরি অচেতন করা হতে পারে। ফলে আপনি অপারেশন চলাকালে অসংবেদনশীল থাকবেন, ব্যথা পাবেন না এবং অপারেশন সহজ হবে।
কী ধরণের অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করা হবে তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন: আপনার ও আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের অবস্থা, সিজারের কারণ এবং আপনার পছন্দ বা মতামত।
সম্ভব হলে গাইনী বিশেষজ্ঞ ও অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞের সাথে এই বিষয়ে আগেভাগে আলোচনা করে ঝুঁকি ও উপকারিতাগুলো বিস্তারিত জেনে নিন। সচরাচর যেসব অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করা হয়—
স্পাইনাল ব্লক: স্পাইনাল ব্লক আপনার শরীরকে কোমরের নিচ থেকে অবশ করে ফেলে। এক্ষেত্রে আপনার কোমরের লেভেলে একটি চিকন সুঁইয়ের সাহায্যে মেরুদণ্ডের ভেতর দিয়ে অ্যানেস্থেসিয়ার ঔষধ দেওয়া হয়। আমাদের দেশে সাধারণত এই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়।
এপিডিউরাল ব্লক: এপিডিউরাল ব্লকও আপনার শরীরের নিচের অংশকে অবশ করে ফেলে। এক্ষেত্রেও স্পাইনাল ব্লকের মতোই কোমরে ইনজেকশন দেওয়া হয়।
তবে সাথে একটি ছোটো ও নরম টিউব বা ক্যাথেটারও লাগানো থাকে, যাতে দরকার হলে পরে এই নল দিয়ে আরও অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া যায়।
উল্লেখ্য, অনেকসময় অ্যানেস্থেসিয়ার জন্য স্পাইনাল ও এপিডিউরাল ব্লক একত্রে ব্যবহার করা হতে পারে।
জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া: এক্ষেত্রে আপনি অপারেশনের সময়ে সম্পূর্ণ অচেতন থাকবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থায় এই ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া বেছে নেওয়া হয়।
অনেকসময় স্পাইনাল অথবা এপিডিউরাল ব্লক দিয়ে অপারেশন শুরু করার পরে বিশেষ জটিলতা দেখা দিলে গর্ভবতীকে জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়ার মাধ্যমে পুরোপুরি অজ্ঞান করা হতে পারে।
সিজারের আগে প্রস্তুত
• ডাক্তারের কাছ থেকে অপারেশন ও অ্যানেস্থেসিয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আপনাকে ও পরিবারের আরেকজন সদস্যকে একটি বিশেষ কাগজে সম্মতিসূচক সই করতে হবে।
• অপারেশনের কয়েক ঘন্টা আগে থেকে আপনার সব ধরনের খাবার ও পানীয়, এমনকি পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এভাবে কতক্ষণ না খেয়ে থাকতে হবে তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন। অপারেশনের ধরনভেদে ২–৮ ঘন্টা পর্যন্ত না খেয়ে থাকার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
• কাপড় বদলে হাসপাতালের গাউন পরার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। অপারেশনের সময়ে ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে এই পরামর্শ দেওয়া হয়।
• আপনার হাতে ইনজেকশন দেওয়ার জন্য একটি ক্যানুলা বসানো হবে। এর মাধ্যমে অপারেশন চলাকালীন সময়ে আপনাকে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক ও প্রয়োজনীয় ঔষধ দেওয়া হবে।
• অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে আপনার পেট, যৌনাঙ্গ ও উরুর অংশবিশেষ পরিষ্কার করা হবে। যৌনাঙ্গের চুল কাঁচি অথবা ট্রিমার দিয়ে কেটে ফেলা হবে।
তবে আগে থেকে সিজার করার পরিকল্পনা থাকলে অপারেশনের আগে আগে সেখানে শেভ করা থেকে বিরত থাকবেন।
কেননা রেজার দিয়ে শেভ করলে ত্বক খুব ছোটো ছোটো করে কেটে যেতে পারে, যা অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
• আপনার রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে তা প্রতিরোধের জন্য ঔষধ দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া সিজার ও প্রসব সংক্রান্ত রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে পায়ে বিশেষ ধরনের মোজা পড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
• অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর পরে আপনাকে সঠিক সময়ে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হবে।
• আপনার প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে একটি সরু নল বা ক্যাথেটার ঢোকানো হবে। এর মাধ্যমে প্রস্রাব বের করে আপনার মূত্রথলি খালি করা হবে।
মূত্রথলি ও জরায়ু খুব কাছাকাছি থাকে। তাই এভাবে মূত্রথলি খালি করে ফেলার মাধ্যমে অপারেশনের সময়ে তাতে আঘাত লাগার সম্ভাবনা কমে।
সিজারের পর তলপেটে ব্যথা
সিজারের পর তলপেটে ব্যথা হওয়ার অনেক গুলো কারণ থকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো পেটের চামড়া এর যে এস্থান গুলো কাটা হয়ে। সে গুলোকে মিলতে তিন মাসে পরিমাণ সময় দিতে হবে।
এবং নার্ভ গুলো কেটে যায় সেগুলো মিলিত হওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন। এহ্মেত্রে শাকসবজি এবং ফল খাওয়া উচিত এতে করে দ্রুত জায়গাটা পূর্ণ হওয়ার জন্য সহায়তা করে।
এবং অধিক পরিমাণ চলাফেরা করার কারণে তলপেট ব্যথা হতপ পারে। সিঁড়িতে উঠা নামা করলে সিজারের পর তলপেটে ব্যথা হতে পারে এবং বারী কোনো জিনিস যদি উত্তোলন করে থাকে তাহলে কিন্তু সিজারের পরে তলপেট ব্যথা হয়।
তবে এই সমস্ত কাজগুলো করতে গিয়ে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ভালো কোন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সিজারের পর ব্যথা হলে কি করবেন। তবে নরমালি ওঠার ক্ষেত্রে যদি সামান্য কিছু ব্যথা অনুভব হয়।
তাহলে এটা নিয়ে প্যারা নেওয়ার কোন বিষয় না। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া উচিত যদি বেশি মাত্রায় ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি ডাক্তার অনুযায়ী পরামর্শ নিতে হবে