অলিভ অয়েল (Olive Oil)/জলপাই তেলের উপকারিতা (Benefits of Olive Oil):
জলপাই নামক গাছের ফল থেকে অলিভ ওয়েল বা জলপাই তেল তৈরি হয়। জলপাই তেলের অপকারিতার থেকে উপকারিতা অনেক বেশি কারণ এতে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য ভিটামিন।জলপাই তেলে স্বাস্থ্যকর মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক এ তেলে ভিটামিন ই, ওমেগা-6,ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড রয়েছে। প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জলপাই তেলের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে কোটি কোটি লোক এই তেল খাদ্য হিসেবে এবং ত্বকে ব্যবহার করে থাকে। এই তেলে বিভিন্ন ওষুধি গুণাবলী রয়েছে।
আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশে শীতকালে জলপাইয়ের তেল অর্থাৎ অলিভ অয়েল বেশি ব্যবহার করা হয় কারণ শীতকালে আবহাওয়া রুক্ষ ও শুষ্ক থাকে।সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ রান্নায় অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট গুলোতে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করে থাকে। অলিভ অয়েলকে 4 ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-এক্সট্রা ভার্জিন, ভার্জিন, পিওর ও এক্সট্রা লাইট। অলিভ অয়েল তেল এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হচ্ছে- মেকানিক্যাল তাপ ও চাপের মাধ্যমে তেলটা তৈরি করা হয়। কোন রকম কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। তেলের রং হয় সবুজাভ, গন্ধ থাকে যয়তুনের মত এবং রাসায়নিক প্রভাবমুক্ত হওয়ায় এটিতে ফেনোলিক এন্টি-অক্সিডেন্ট, এন্টি-ইনফ্ল¨vমেটরি, সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদান অটুট থাকে।
অলিভ অয়েল(Olive Oil) তেলের উপকারিতাঃ অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ব্যাপক। এ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
হৃদরোগ প্রতিরোধেঃ অলিভ অয়েলে থাকা মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। অলিভ অয়েল (Olive Oil) এলডিএল কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটা খারাপ কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রন করে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।এছাড়া শরীরের ক্ষতিকারক চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ অলিভ অয়েলের রয়েছে কারসিনোজেনিক উপাদান। এই উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে অর্থাৎ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এরা কাজ করে। সৌদি আরবের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এতে রয়েছে অলিরোপেইন নামের রাসায়নিক পদার্থ যেটা ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে।
টাইপ-2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ অন্য রোগ নিরাময়ের মত অলিভ অয়েল টাইপ-2 ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এই তেল ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। আরো একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসকল নারী অলিভ অয়েল তেল রান্নায় ব্যবহার করে তাদের ডায়াবেটিস আক্রান্তের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। আর যারা রান্নায় অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করে না তাদের ডায়াবেটিস আক্রান্তের হার বেশি।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ঃ এই তেলের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য এমন এটা পরিপাকতন্ত্রকে উদ্দীপিত করতে পারে, যার ফলে খাবার পিচ্ছিল ভাবে অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে দ্রুত গতিতে চলাচল করতে পারে এবং এটি মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ হওয়ায় কোন খাবার কোলনের মধ্যে দিয়ে যেয়ে দ্রুত নিষ্কাসন করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়। সাধারণত দিনে এক চা চামচ (1 tea spoon) জলপাই তেল খেলে উপকার পাওয়া যায়।
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংশ করেঃ আমাদের পেটে Helicobacter Pylori নামক ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। এটা আলসার এবং পাকস্থলির ক্ষত সৃষ্টি করে, এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল ব্যবহারের ফলে এই Helicobacter Pylori দমনে সাহায্য করে।
হতাশা দূর করতেঃ মানুষের জীবনে যেকোনো সময় হতাশা বিরাজ করতে পারে, তো এই হতাশাকে ঠিক করতে হলে প্রতিদিন নিয়মিত মাত্রায় অলিভ অয়েল সেবন করতে হবে। এটি মস্তিষ্কে সেরোটনিন ক্ষরণ করে আমাদের মনে আনন্দ তৈরি করে ফলে হতাশা দূর হয়।
রোদ থেকে রক্ষা পেতেঃ Olive Oil রোদে পোড়া ভাব দূর করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে ত্বক রোদে পুড়ে যায় ফলে অস্বস্তি দেখা দেয়। অলিভ অয়েল শরীরে লাগালে সমস্যাটি দূর হয়, শরীরে আরামবোধ হয়।
ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণেঃ আমাদের ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষা করতে অলিভ অয়েল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রেখে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং সঠিক মাত্রায় ব্যবহারের ফলে ত্বকের স্বাস্থ্য প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল হয়। এটি বলিরেখা, একনি, মেছতা এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
চুল, চোখ, নখের যত্নেঃ এই তেল চুলকে সতেজ এবং ঘন করে চুল ফেটে যাওয়া এবং পড়ে যাওয়ার হাত হতে রক্ষা করে। Olive Oil সেবন এ রাতকানা, গ্লকোমা ও চোখের অন্যান্য সমস্যা দূর হয়। অলিভ অয়েল তেল দ্বারা নখের উপর এবং চারপাশ ভালোভাবে মালিশ করলে নখের ভঙ্গুরতা দূর হয়ে আস্তে আস্তে নখ হয়ে উঠবে সুন্দর, সুস্থ এবং শক্ত ও উজ্জ্বল।
স্নায়ুকোষের সুরক্ষায়ঃ Olive Oil এ রয়েছে নিউরো প্রটেকটিভ ক্ষমতা। এটি স্নায়ুর কোষকে সুরক্ষা করে এবং বিভিন্ন রোগের লক্ষণ উপশম করে । আমরা কম বেশি সকলে আলঝেইমার রোগের সাথে পরিচিত। এই রোগে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে মানুষের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট হতে শুরু করে। মেডিটেরিয়ান ডায়েটে অভ্যস্ত একদল তরুণের উপর গবেষণা করে এটার সাফল্য পাওয়া গেছে।
ব্রেন ড্যাভলাপে অলিভ অয়েলঃ অলিভ অয়েল শুধু আপনাকে প্রাণবন্ত করেই তুলবে না এটি গ্রহণে মস্তিষ্কের কাজের উন্নতির পাশাপাশি, মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি এবং বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে অলিভ অয়েল গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কে প্লাগ গঠনের হার কমে যায়, প্লাগ হচ্ছে এক ধরনের প্রোটিন যা মস্তিষ্কে জমা হলে স্মৃতিশক্তি আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে এটি গ্রহণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
শিশুদের প্রয়োজন অলিভঃ অলিভ অয়েল হচ্ছে শিশুদের জন্য একটি মাসাজ ওয়েল কারণ এটি শিশুর ত্বককে নরম করে এবং আদ্রতা দেয় এটিতে পুষ্টিও রয়েছে। ডায়াপার ব্যাবহারের কারণে শিশুর ত্বকে যে র্যাশ বের হয় তা নিরাময়ে এই তেল ব্যবহার করা হয়। সুতরাং শিশুদের খুব প্রয়োজনীয় তেল হচ্ছে জলপাই তেল (Olive Oil)।
দৈনিক জলপাই তেল গ্রহণের মাত্রাঃ U.S. (FDA) Food and Drug Administration এর মতে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ গ্রাম জলপাইয়ের তেল গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এই বিবৃতিতে আরো বলেছেন যে এটি সম্পৃক্ত চর্বির বিকল্প হিসেবে বা অতিরিক্ত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। এটি ওষুধের মত পান না করে অন্য তেলের পরিবর্তে এই তেল শরীরে ব্যবহার করতে হবে। তবে অলিভ অয়েল তেলের সঠিক ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।